জনপ্রিয় ৫ সংবাদ

আরো কিছু সংবাদ

১ মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস

এমএইছ চৌধুরী জুনাইদঃ ১ মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস। বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর মে মাসের ১ তারিখে উদযাপিত হয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শ্রমজীবী মানুষ এবং শ্রমিক সংগঠনগুলো রাজপথে মিছিল ও শোভাযাত্রার মাধ্যমে এ দিবসটি পালন করে থাকে।

বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় ৮০টি দেশে ১ মে সরকারি ছুটির দিন এবং আরও অনেক দেশে এ দিনটি বেসরকারিভাবে শ্রমিক দিবস হিসেবে পালন করা হয়। মে দিবস পালনকারি শ্রমিকদের অনেকেই আবগত নয় এই দিবসটি কেন পালন করা হয়। এই দিবসটিকে কেন শ্রমিক দিবস বলা হয়?

ইতিহাস থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী ১৮৮৬ সালের ১ মে তারিখে আমেরিকার শিকাগো শহরের হে মার্কেটের সামনে দৈনিক আট ঘন্টা কাজ ও ন্যায্য পারিশ্রমিকের দাবীতে শ্রমিকরা একত্রিত হয়েছিল। তখনকার দিনে কল-কারখানায় খেটে খাওয়া শ্রমিকদের গড়ে প্রতিদিন ১৬ ঘন্টা কাজ করতে হতো।

এভাবে কাজ করে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য হানির পাশাপাশি শ্রমজীবি শিশুরা হয়ে পড়েছিল অস্থিচর্মসার। তখনই দৈনিক ৮ ঘন্টা শ্রম নিশ্চিত করার দাবিতে শুরু হয় আন্দোলন।

ওই বছরের ১ মে শ্রমিকদের ডাকা ধর্মঘট ও সমাবেশে প্রায় তিন লাখ মেহনতি মানুষ অংশ নিয়েছিল। আন্দোলনরত ক্ষুদ্ধ শ্রমিকদের নিবৃত্ত করতে গিয়ে একসময় পুলিশ শ্রমিকদের মিছিলে এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। এতে পুলিশের গুলিতে ১১ জন নিরীহ শ্রমিক নিহত হন ও আহত হন অনেকেই। এ ঘটনায় গ্রেফতারও হন আরো অনেক শ্রমিক।

পরবর্তীতে এক প্রহসনমূলক বিচার কার্য পরিচালনার মাধ্যমে গ্রেফতারকৃত শ্রমিকদের মধ্য থেকে ছয় জনকে আন্দোলনে সম্পৃক্ত থাকার অপরাধে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। পরে কারাগারের অমানবিক বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেতে এক শ্রমিক নেতা আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।

এতে আন্দোলনরত শ্রমিকদের বিক্ষোভ আরো প্রকট আকার ধারণ করে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে তদানিন্তন যুক্তরাষ্ট্র সরকার আন্দোলনরত শ্রমিকদের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিল।

১৮৮৯ সালের ১৪ জুলাই ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে মে মাসের ১ তারিখকে শ্রমিক দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। তৎপরবর্তী ১৮৯০ সালের ১ মে থেকে এ দিবসটি বিশ্বব্যাপী ‘আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস’ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। এই মে দিবসটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রাপ্তির মাধ্যমে সারা বিশ্বের শ্রমিকদের মাঝে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছিল।

এর পর মালিকপক্ষ ও শ্রমিকদের মাঝে গড়ে উঠা সুসম্পর্কের প্রভাবে শ্রমিকদের দৈনিক ১৬ ঘন্টা কাজের সময় হ্রাস পেয়ে ৮ ঘন্টা নির্ধারিত হয়। এতে সারা বিশ্বের শ্রমিকরা তাদের শ্রমের উপযুক্ত মর্যাদা ও ন্যায্য মুজুরী নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়।

নিজেদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে এগিয়ে আসায় মেহনতি মানুষগুলো মুক্তি পেতে শুরু করে শৃঙ্খলে আবদ্ধ জীবন থেকে। বিশ্বের ইতিহাসে সংযোজিত হয় সামাজিক পরিবর্তনের আরেকটি নতুন অধ্যায়।

আমাদের দেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি মধ্য আয়ের দেশ। দেশে শ্রমজীবি মানুষের সংখ্যাও অনেক, তাই এ দিবসটির মর্যদা রক্ষার্থে বাংলাদেশেও ১ মে সরকারী ছুটির দিন। এ দেশে সর্বস্তরের শ্রমিকরা মহা উৎসাহ ও উদ্দীপনায় মে দিবস পালন করে থাকে।

শ্রমিক সংগঠনগুলো মে দিবসে বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক ও কল্যাণমুখী কর্মসূচির আয়োজন করে থাকে। বাংলাদেশের শ্রমিকরাও এদিনটিকে আনন্দঘন পরিবেশে উদযাপন করে।