জনপ্রিয় ৫ সংবাদ

আরো কিছু সংবাদ

বাশেঁর দেখা মিলল হবিগঞ্জ আধুনিক সদর হাসপাতালে !

হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতাল এখন নামেই আধুনিক। ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে এই হাসপাতালের প্রয়োজনীয় সুবিধা।

অবস্থা এখন এমন যে এখানে বিভিন্ন ওয়ার্ডের বেডগুলোতে স্যালাইন দেওয়ার স্ট্যান্ডও খুঁজে পাওয়া যায় না। এর বদলে রোগীদের বেডের পাশে ব্যবহার হচ্ছে বাঁশ। এ নিয়ে হাসপাতালে আগত রোগীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। অনেক রোগীর স্বজন বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও দিচ্ছেন স্ট্যাটাস। কিন্তু, এরপরেও টনক নড়েনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালটিতে প্রতিটি ওয়ার্ডে এই করোনাকালীন সময়েও রোগীর ভীড় রয়েছে। তবে হাসপাতালের ভেতরের পরিবেশ খুবই অপরিচ্ছন্ন। ময়লা ও দুর্গন্ধের কারণে হাসপাতালের ভেতরে সবাইকে নাকে-মুখে হাত দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, নিয়মিত পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি এই হাসপাতালে তেমন একটা মানা হয় না।

প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডের বেডে রোগী থাকলেও তাদের জন্য নেই কোন স্যালাইন লাগানোর জন্য স্ট্যান্ড। নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিটি বেডের পাশে স্যালাইন কিংবা এ ধরনের ওষুধ ব্যবহারের সুবিধার্থে একটি করে লোহার স্ট্যান্ড যুক্ত বা আলাদাভাবে থাকার কথা। কিন্তু, কোনও বেডের পাশে তেমন কিছু দেখা যায়নি। বরং দেখা গেছে, রোগীর স্বজনরা বাধ্য হয়ে নিজ নিজ প্রয়োজনে বাঁশ এনে বেডের সঙ্গে আটকিয়ে স্ট্যান্ড হিসেবে ব্যবহার করছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সদর উপজেলার নিজামপুর থেকে আসা এক নারী রোগীর আত্মীয় রহিম মিয়া জানান, হাসপাতালের নার্স-আয়াদের কাছে চেয়েও স্ট্যান্ড পাইনি। তারা বলেছেন রোগীর স্যালাইন ঝোলানোর স্ট্যান্ড এ হাসপাতালে নাকি খুবই কম। সেগুলোও ভেঙে গেছে। পাওয়া যাবে না। বাধ্য হয়ে আমাদের প্রয়োজনে বাঁশ দিয়ে স্ট্যান্ড বানিয়ে নিয়েছি। ডাক্তার এসে স্যালাইন পুশ করার কথা বলে চলে যায়, সেটা কিসের ওপর আটকিয়ে পুশ করা হবে সে বিষয়ে কিছু বলে না। স্ট্যান্ড না থাকলে স্যালাইন হাতে ধরে দাঁড়িয়ে বা বসে থাকতে হয়। তাতে স্যালাইনের ফোঁটার গতি কম-বেশি হয়ে যায়। তাই অন্যদের কাছে বাঁশ নিয়ে আসার পরামর্শ পেয়েছি। তাদের মতো আমরাও বাঁশ দিয়ে স্ট্যান্ড বানিয়েছি। এ হাসপাতাল শুধু নামেই আধুনিক, বাস্তবে কিছুই নেই।

হবিগঞ্জ সদর উপজেলার পইল গ্রাম থেকে রোগী নিয়ে হাসপাতালে আসা রোজী কমলা বানু জানান, অধিকাংশ বেডের মধ্যেই স্যালাইন দেওয়ার কোনও স্ট্যান্ড নাই, যার প্রয়োজন বাঁশ দিয়েই কাজ সারতে হচ্ছে। হাসপাতালের কোনও কর্মচারীকে অনুরোধ করার পরও কোনও স্ট্যান্ড পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে আব্দুল মুবিন মিজান নামে এক ব্যক্তি তার ফেসবুকে স্ট্যাটাসও দিয়েছেন। ওই স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, ‘আমি গতকাল (রবিবার রাতে) আমার এক আত্মীয় (রোগীকে) নিয়ে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে চিকিৎসা জন্য গিয়েছিলাম। কর্তব্যরত ডাক্তার আমার রোগীকে দেখে হাসপাতালে ভর্তির করার জন্য পরামর্শ দিলেন। কী আর করা? রোগীকে নিয়ে গেলাম নিচতলায় নারী মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি করার জন্য।’

‘আমার রোগীকে নিয়ে ওয়ার্ডে যাওয়ার সাথে সাথেই চোখে পড়লো বাঁশ, অধিকাংশ চিকিৎসাধীন রোগীর সিট বেডের সাথে ঝুলানো আছে একটি করে ২-৩ হাত লম্বা বাঁশ। স্বাভাবিকভাবে মনে প্রশ্ন জাগলো, এসব বাঁশের মানে কী?’

‘‘তবে এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেতে আমার বেশি সময় লাগলো না। ওয়ার্ডে কর্তব্যরত সেবিকা (নার্স) আমাকে বললেন, ‘ভাই আপনার রোগীকে দ্রুত স্যালাইন দিতে হবে।’ তিনি স্যালাইন কেনার সঙ্গে সঙ্গে রোগীর স্যালাইন ঝোলানোর জন্য একটি স্ট্যান্ড সংগ্রহেরও পরামর্শ দিলেন। স্যালাইন এনে খুঁজতে শুরু করলাম স্যালাইন দেওয়ার স্টেন (স্ট্যান্ড)। কোথাও খুঁজে পেলাম না এই মহা মূল্যবান জিনিসটি।’’

স্ট্যাটাসে তিনি আরও লেখেন, এই মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে মোট রোগীর সংখ্যা প্রায় ৩০ জন। দুঃখজনক হলেও সত্য, এত রোগীর স্যালাইন দেওয়ার জন্য একটি স্যালাইন স্ট্যান্ডও নেই এই ওয়ার্ডে। ফলে বাধ্য হয়ে রোগীকে স্যালাইন দেওয়ার প্রয়োজনে ব্যবহার করতে হচ্ছে বাঁশ অথবা জানালার লোহার গ্রিল।’

তিনি আরও লিখেছেন ‘শিশু ওয়ার্ডের চিত্রও প্রায় একই রকম। আমি হতাশা নিয়ে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও হাসপাতালে একখানা স্ট্যান্ড পেলাম না। খুঁজে একটা বাঁশও পাইলাম না। পরে জানতে পারিলাম স্যালাইনে ব্যবহারিত (ব্যবহৃত) বাঁশগুলো রোগীরা (রোগীর স্বজনরা) নিজেরাই সংগ্রহ করিয়া আনিয়াছে। আমি একটি বাঁশ একজন রোগীর কাছ থেকে ধার এনে আমার রোগীর স্যালাইন স্টেন (স্ট্যান্ড) হিসাবে ব্যবহার করিলাম। এই হলো বর্তমানে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালের হাল চিত্র!’

ঐ স্ট্যাটাসে তিনি অন্যদের পরামর্শ দিয়েছেন, ‘যারা চিকিৎসার জন্য সদর হাসপাতালে যাবেন দয়া করে সাথে একখানা ২-৩ হাত লম্বা বাঁশ নিয়া যাবেন। বলা তো যায় না বাঁশের প্রয়োজন হতে পারে!’

হাসপাতালের এই দুরবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. শামীম আরা বলেন, এখানে ২৫০ শয্যার হাসপাতাল হলেও কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম রয়েছে ১০০ শয্যার। আমার অনেক বেডের স্ট্যান্ড নষ্ট হয়ে গেছে। এর বিকল্প হিসেবে দু একটিতে বাঁশ থাকতে পারে।

বাইরে থেকে বাঁশ নিয়ে আসার কথা অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘তবে রোগীর স্বজনরা বাঁশ নিয়ে আসছে কথাটি মিথ্যা। আমরা চেষ্টা করছি একাধিক নষ্ট হওয়া স্ট্যান্ড মেরামত করার জন্য। তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে কথা হয়েছে। আশা করি দ্রুতই ঠিক হয়ে যাবে।’

হবিগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ‘বিষয়টি আমার নজরে নেই। আমি আপনার মাধ্যমে শুনলাম। এটা সাময়িক কাজের জন্য হতে পারে। তবে বাঁশ দিয়ে কোনও সমাধান হতে পারে না। আমি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেবো।’