জনপ্রিয় ৫ সংবাদ

আরো কিছু সংবাদ

আজ আজমিরীগঞ্জ ও শায়েস্তাগঞ্জ মুক্ত দিবস

আজ ৮ ডিসেম্বর আজমিরীগঞ্জ মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে মুক্ত হয়েছিল তৎকালীন ভাটি বাংলার রাজধানী খ্যাত আজমিরীগঞ্জ থানা। মুক্তিযোদ্ধের বিরত্বগাথা দিনগুলোর মধ্যে একটি দিন হল আজমিরীগঞ্জ মুক্ত দিবস। সেদিন পূর্বাকাশে সূর্যদয়ের সাথে সাথেই মেঘনা রিভার ফোর্সের কোম্পানী কমান্ডার, ১১নং সেক্টরের ট্রেনিং ইনচার্জ ফজলুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বে ৭ ঘন্টা সম্মুখযুদ্ধ শেষে পাকসেনা, রাজাকার, আলবদরদের হটিয়ে মুক্ত করেন আজমিরীগঞ্জ উপজেলা। যুদ্ধেরপর আজমিরীগঞ্জ উপজেলা সদরে পাকসেনা, পুলিশ, আলবদর-রাজাকারদের বিতারিত করে বীরযোদ্ধাদের মুহমুহ গুলি ও জয় বাংলা শ্লোগানের মাধ্যমে বীরদর্পে এগিয়ে আসে কয়েক হাজার মুক্তিকামী জনতা। ফুলের মালা গলায় দিয়ে বরন করে যুদ্ধকালীন কমান্ডার মোঃ ফজলুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বাধিন বীরমুক্তিযোদ্ধাদের। এ সময় আজরিমীগঞ্জ থানার প্রতিষ্ঠাতা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সাবেক সেনা কর্মকর্তা ফজলুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বে ঐতিহাসিক গরুরহাট ময়দান ও থানা কম্পাউডে উত্তোলন করা হয় কাংখিত সেই বাংলাদেশের লাল সবুজের রক্তিম পতাকা। এ সময় এফ আর চৌধুরীর সহযোদ্ধা অন্যান্যদের মধ্যে ছিলেন তৈয়বুর রহমান খান বাচ্চু, বৃটিশ সেনাবাহিনীর সদস্য নুর ইসলাম মুন্সি, নেত্রকোণার সারফান আলী, আব্দুর রাজ্জাক মিয়া, আক্কাছ মিয়া, মর্তুজ আলী ওরফে চান মিয়া, সালাহউদ্দিন মিয়া, সিরাজ মিয়া, আব্দুস সোবহান, আক্কেল আলী, আব্দুল হাই, রমজান মিয়া, মুজিবুর রহমান, মিন্নত আলীসহ মেঘনা রিভার ফোর্সের সদস্য বিভিন্ন থানার ১শ ১৭ জন সম্মুখ সমর যোদ্ধা । পরে হাজারো জনতার আনন্দে উদ্দেলিত ভালবাসায় শিক্ত হয়ে কমান্ডার মোঃ ফজলুর রহমান চৌধুরী আবেগ জড়িত কন্ঠে স্বাধীনতা পাওয়া এবং চাওয়ার উদ্দেশ্য বর্ণনা করেন। শুধু আজমিরীগঞ্জ থানাই নয় ফজলুর রহমান চৌধুরীর কমান্ডে বলিষ্ট নেতৃত্বে পাকহানাদার আলবদর রাজাকারদের হটিয়ে হবিগঞ্জ জেলার পাশ্ববর্তী ইটনা, অষ্টগ্রাম, নিখলী নেত্রকোণা জেলার তৎকালিন কমলাকান্দা, সুনামগঞ্জের বিশ^মভরপুর, থানা সম্মুখ সমরে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করে মুক্ত করেন এবং রাজাকার, আলবদর, পাকসেনা, পুলিশ মিলিডিয়া আত্মসমর্পন করে ও নিহত হয়।

আজ ৮ ডিসেম্বর রবিবার শায়েস্তাগঞ্জ মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এ দিনেই শক্র মুক্ত হয়েছিল হবিগঞ্জ সদর উপজেলার শায়েস্তাগঞ্জ শহর। সেই মুক্তিকামী জনতা আকাশে উড়িয়ে ছিল বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত লাল-সবুজ পতাকা। চারদিকে মুখে মুখে ধ্বনিত হচ্ছিল ‘জয়বাংলা’ শ্লোগান। এরমধ্যে অতিবাহিত হয়েছে ৪৫টি বছর। ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ কালো রাতে হানাদার বাহিনী কর্তৃক গণহত্যা শুরুর পর পরই স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে এখানে গড়ে তোলেন প্রতিরোধ। বৃহত্তর সিলেটের সঙ্গে সারা দেশের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করতে মুক্তিবাহিনী উড়িয়ে দেয় শায়েস্তাগঞ্জ খোয়াই ব্রিজটি। স্থানে স্থানে রেললাইনেও প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এরই মাঝে ২৯ এপ্রিল বৃহস্পতিবার হঠাৎ করেই পাক-হানাদার বাহিনী শায়েস্তাগঞ্জ শহরে এসে উপস্থিত হয় বলে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা জানান। এখানে অবস্থান নিয়ে তারা (পাকরা) সাধারণ মানুষের ওপর চালাতে থাকে নির্মম অত্যাচার। যোগাযোগের জন্য খোয়াই নদীতে ফেরী চালু করে। স্থাপন করে ক্যাম্প। তারা মেরামত করে ব্রিজটি।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ থেকে জানা যায়, অসংখ্য মানুষকে চোখ বেঁধে বিধ্বস্ত খোয়াই ব্রিজের ওপর থেকে কখনো গুলি করে, আবার কখনো হাত-পা বেঁধে জীবন্ত অবস্থায়ই নদীতে ফেলে দিতো হায়েনার দল। এদিকে সারা দেশের সঙ্গে সড়ক ও রেল এবং নৌ-পথের যোগাযোগের সুবিধার্থে হানাদার বাহিনী এখানে তাদের শক্তি বৃদ্ধি করতে থাকে। ফলে মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা সাধারণ মানের অস্ত্র নিয়ে চোরাগুপ্তা হামলা চালালেও যুদ্ধে এদের সঙ্গে পেরে উঠছিলেন না। অন্যদিকে এখান থেকে ভারত সীমান্ত কাছে থাকায় পাকিস্তানিরা সবসময় ভারী অস্ত্রে-শস্ত্রে সজ্জিত থাকতো। পাশাপাশি মিত্র বাহিনীর ভয়ে ভীত থাকতো বলে গুপ্তচর সন্দেহে তারা নির্বিচারে অনেক সাধারণ মানুষকেও হত্যা করে। অবশেষে আসে সেই শোভক্ষণ। ১৯৭১ এর ৮ ডিসেম্বর সিলেটের সর্বত্র যুদ্ধে হেরে পাকবাহিনী সড়ক ও রেলপথে শায়েস্তাগঞ্জ হয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে পালাতে থাকে। একই সঙ্গে শায়েস্তাগঞ্জ থেকেও ছটকে পড়ে হায়নার দল। দীর্ঘ নয় মাস পর এলাকার সর্বস্তরের মানুষ বিজয় পতাকা হাতে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে রাস্তায়। ‘জয়বাংলা’ শ্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে শায়েস্তাগঞ্জ শহর।