হবিগঞ্জ শহরে মাতৃত্বের মায়ায় ১০ দিন পর শিশুকে আনতে ছুটে গেলেন এক কুমারী মা। এ ঘটনাটি নিয়ে শহরে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। তবে মায়ের দাবি নিয়ে প্রশাসন পড়েছেন বিপাকে। সে কি প্রকৃত মা নাকি কারো শিখানো মা। এ নিয়ে ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে মা দাবি করা কিশোরী হাসপাতালে আসার পর কুড়িয়ে পাওয়া অভিভাবক জোসনাকে পাওয়া যাচ্ছে না।
গত মঙ্গলবার রাতে সদর উপজেলার ছড়িপুর গ্রামের ফারজানা (১৭) নামের এক কিশোরী মায়ের দাবি নিয়ে হাসপাতালে এসে ওই শিশুটি তার বলে দাবি করেন। কিন্তু হাসপাতাল কতৃর্পক্ষ তা মেনে নেয়নি। তারা জানিয়েছেন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বুঝা যাবে সে প্রকৃত মা কি না।
জানা যায়, হবিগঞ্জে পরিত্যক্ত ময়লার ড্রেন থেকে উদ্ধার নবজাতকের মা দাবি করে ওই কিশোরী থানায় আবেদন করেছেন৷ তিনি শিশুটিকে নিজের কাছে রাখতে এবং পিতৃপরিচয় নিশ্চিত করতে আইনি সহায়তা চেয়েছেন। এদিকে উদ্ধারের পর যে নারী ওই নবজাতককে হাসপাতালে নিয়ে যান, তিনিও শিশুটিকে লালন-পালনে আগ্রহী। গত ৩ মে শহরের মোহনপুর এলাকার ময়লার ড্রেন থেকে একটি ছেলে নবজাতক উদ্ধার করেন স্থানীয়রা। পরে শিশুটিকে ওই এলাকার জোসনা বেগম হাসপাতালে নিয়ে যান। চিকিৎসার পর শিশুটি এখন সুস্থ, সে আছে জোসনা বেগমের কাছেই।
তবে শিশুটিকে উদ্ধারের চারদিন পর নিজের সন্তান দাবি তুলেন ১৭ বছরের এক কুমারী কিশোরী। প্রবাসী এক ব্যক্তিকে পিতৃত্বের দায় দিয়ে আইনি স্বীকৃতি চেয়েছেন তিনি। এ ছাড়া শিশুটিকে নিজের জিম্মায় পাওয়ার আবেদনও করেছেন।
ওই কিশোরীর বাড়ি হবিগঞ্জ সদর উপজেলায়।
তিনি বলেন, ‘তার মা, বাবা, ভাই ও এক বোন হবিগঞ্জ শহরের মোহনপুর এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকছেন। তবে তিনি থাকেন সদর উপজেলায় নানা বাড়িতে। সেখানে স্থানীয় এক যুবকের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক হয়। ওই যুবক তাকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে শারীরিক সম্পর্কে জড়ান।’
তিনি আরও বলেন, ‘এক পর্যায়ে আমি গর্ভবতী হয়ে পড়ি। তবে ভয়ে ও লজ্জায় বিষয়টি গোপান রাখি। কয়েক মাস আগে প্রেমিক দুবাই চলে যায়।’ এরপর হবিগঞ্জে মা-বাবার কাছে চলে আসেন ওই কিশোরী। তিনি দাবি করেন, মঙ্গলবার রাতে বাড়ির বাইরে ছেলে সন্তানের জন্ম দেন। এরপর বাড়ির কাউকে কিছু না জানিয়ে ঘরে ফিরে ঘুমিয়ে পড়েন।
ওই কিশোরীকে বুধবার সকালে ভর্তি করা হয়েছে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে। কিশোরীটির মা জানান, সন্তান জন্মের দুইদিন পর মেয়ে তাকে সবকিছু খুলে বলে। এরপর তারা শিশুটিকে ফিরে পেতে থানায় অভিযোগ করেন।
তবে এই দাবি মানতে রাজি নন নবজাতকটিকে নিজের কাছে রাখা জোসনা আক্তার।
তিনি বলেন, ‘আমি শিশুটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেছি। এখন এক মেয়ে বলছে শিশুটি নাকি তার। আমি শিশুটিকে লালন-পালন করতে চাই।’
হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুক আলী বলেন, ‘এক কিশোরী শিশুটিকে নিজের সন্তান দাবি করে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে।’