জনপ্রিয় ৫ সংবাদ

আরো কিছু সংবাদ

লাখাইয়ে র‍্যাবের ভয় দেখিয়ে অর্থ আত্বসাৎকারী সাংবাদিক উত্তম দেব শালিসে দোষী সাব্যস্ত

লাখাইর বুল্লা বাজারে র‍্যাব-পুলিশ, মোবাইল কোর্টের ভয় দেখিয়ে অর্থ আত্বসাৎকারী প্রতারক চক্রের মূল হোতা উত্তম দেব শালিশে দোষী সাব্যস্ত। বিচার শুরুর আগেই টাকা ফেরতের শর্তে আত্মসমর্পণ, জরিমানা এবং ২ লক্ষ টাকা মুচলেকার শর্তে সালিশে নিষ্পত্তি।

নানা টালবাহানার পর লাখাই উপজেলার বুল্লা বাজারে র‍্যাব-পুলিশ ও মোবাইল কোর্টের মিথ্যা ভয় দেখিয়ে সাধারণ ব্যবসায়ীদের টাকা আত্মসাৎকারী চক্রের মূল হোতা উত্তম কুমার দেব অবশেষে ব্যবসায়ীদের কাছে নতি স্বীকার।

বুল্লা বাজারের স্বর্ণ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোপীমোহন শীল অভিযোগ করেন গত (৮ মে) শ্রীমঙ্গল র‍্যাব-৯ এ তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে বলে ভয় দেখিয়ে মামলা থেকে বাঁচানোর কথা বলে প্রতারণা করে ৪৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন বুল্লা বাজারের ডিম ব্যবসায়ী রাঢ়িশাল গ্রামের প্রানেশ দেব ভুলুর পুত্র উত্তম কুমার দেব।

২৬ মে বুধবার বুল্লা বাজারে এ নিয়ে লাখাই উপজেলা চেয়ারম্যান এডভোকেট মুশফিউল আলম আজাদের সভাপতিত্বে এক সালিশ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সালিশে উত্তম কুমার দেব এর বিরুদ্ধে বুল্লা বাজারের স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপীমোহন শীলের নিকট থেকে প্রতারণা করে আত্মসাৎকৃত ৪৫ হাজার টাকা ফেরত ও হয়রানি করার দায়ে আরো ৫ হাজার টাকা সহ মোট ৫০ হাজার টাকা ফেরত দেয়া হবে বলে রায় হয়।

এছাড়া আরেক অভিযোগকারী রাঢ়িশাল গ্রামের অর্জুন রবি দাশের ৮ হাজার টাকা ও ফেরত দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। রায় প্রদানকালে উপজেলা চেয়ারম্যান বলেন, উত্তম দেব প্রতারণা করে টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। ভবিষ্যতে বুল্লা বাজারের কোন ব্যবসায়ীর সাথে এ ধরনের প্রতারণা করলে দু- লক্ষ টাকা মুচলেকা রেখে উত্তমের বিরুদ্ধে বিচার অনুষ্ঠিত হবে বলে শর্ত রাখা হয়। এছাড়াও ভবিষ্যতে উত্তম দেব বুল্লা বাজারে ব্যবসা করতে হলে বাজারের ব্যবসায়ীদের সাথে সমন্বয় রেখে ব্যবসা পরিচালনা করতে হবে বলেও বাধ্যবাধকতা রাখা হয়।

কথিত সাংবাদিক উত্তম দেব
কথিত সাংবাদিক উত্তম দেব।

 

এ সময় সালিশ বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মোড়াকরি ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাশেম মোল্লা ফয়সল, সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক, সাবেক চেয়ারম্যান আকরাম আলী, বুল্লা বাজার ব্যকস এর সাবেক সভাপতি বাদশা মিয়া, সাবেক সাঃ সম্পাদক হাবিবুর রহমান আজনু ও জাকির হোসেন, বুল্লা বাজার ব্যকস এর সদস্য সচিব আলহাজ্ব মোঃ বাহার উদ্দিন, ব্যকস সদস্য ও বিশিষ্ঠ ব্যবসায়ী মাসুকুর রহমান মাসুক, উপজেলা আঃলীগ যুগ্ম সাঃসম্পাদক জুয়েল রানা, সাংগঠনিক সম্পাদক খোকন চন্দ্র গোপ, করাব ইউপি আঃলীগ সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস, আব্দুল মালেক মেম্বার, লাখাই প্রেসক্লাব সভাপতি এডভোকেট আলী নোয়াজ, জাহারুল ইসলাম তাউস সহ বাজারের ব্যবসায়ী ও এলাকার গন্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ।

উল্লেখ্য, ইতোপূর্বে উত্তম কুমার দেব বিভিন্ন সময়ে বুল্লা বাজারের ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের নিকট হতে পুলিশ, র‍্যাব ও মোবাইল কোর্টের ভয় দেখিয়ে প্রতারণা করে অর্থ আত্মসাৎ করে আসছিল। এরই ধারাবাহিকতায় গত (৮ মে) বুল্লা বাজারের স্বর্ণ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোপীমোহন শীলের নিকট থেকে মামলা ও র‍্যাব-পুলিশের ভয় দেখিয়ে এ থেকে বাঁচানোর কথা বলে ৪৫ হাজার টাকা প্রতারণা করে হাতিয়ে নেন উত্তম।

পরে এ বিষয়ে পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে এবং ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে সমালোচনা তৈরি হলে প্রতারক উত্তম বিষয়টি মীমাংসা করার জন্য লাখাই উপজেলা চেয়ারম্যান এডভোকেট মুশফিউল আলম আজাদ এর দ্বারস্থ হন।

গত (১৮ মে) সালিশের সিদ্ধান্ত হলে ধুরন্ধর উত্তম দেব সুকৌশলে সেই সালিশের তারিখটি টালবাহানা করে বানচাল করে দেন। পরবর্তীতে গত (২১ মে) পুনরায় সালিশের দিন ধার্য করা হয় এবং উপজেলা চেয়ারম্যান, এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, ব্যবসায়ী মহল এবং নালিশকারী গোপীমোহন উপস্থিত হলেও রহস্যজনক কারণে শালিস বৈঠকে অনুপস্থিত থাকেন চতুর উত্তম কুমার দেব।

এতে উপস্থিত গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, ব্যবসায়ীমহল ও উপজেলা চেয়ারম্যান এর মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। এ সময় উপজেলা চেয়ারম্যান জানান ইতিমধ্যে তিনি নিজেও উত্তমের আরো কয়েকটি প্রতারণা সংক্রান্ত রেকর্ডিং শুনেছেন।

ওই সালিশ বৈঠকে উত্তমের প্রতারণার শিকার রাঢ়িশাল গ্রামের অর্জুন রবিদাসের ছেলে অতীন রবিদাস জানান, উত্তম কুমার দেব মামলার ভয় দেখিয়ে তাদের কাছ থেকেও ৮ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

এ সময় (২৩ মে) রবিবারের মধ্যে সালিশ প্রক্রিয়ায় অভিযুক্ত উত্তম অংশগ্রহণ না করলে পরবর্তীতে করণীয় নির্ধারণ করার জন্য আগামী (২৮ মে) শুক্রবার সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানান উপজেলা চেয়ারম্যান। পরবর্তীতে উত্তম বহুমুখী চাপে পড়ে গতকাল (২৬ মে) তারিখে সালিশে উপস্থিত হন।