হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার হাট-বাজার গুলোতে মাছের সরবরাহ চাহিদার তুলনায় কম থাকায় চড়াদামে বিক্রি হচ্ছে। এতে ক্রেতাসাধারণ ভোগান্তিতে পড়েছে।
অন্যান্য বছর বর্ষার বিদায়লগ্নে যেখানে মাছের সরবরাহ বেড়ে যেত কয়েকগুন সেখানে বর্তমানে মাছের আকাল।
বাজারে দেশী প্রজাতির মাছের পাশাপাশি চাষের মাছেরও সরবরাহ কম থাকায় অবস্থাপন্নরা মাছ কিনতে পারলেও নিম্ন আয়ের ক্রেতাসাধারণ পড়েছে বিপাকে।
এদিকে লাখাই উপজেলা মাছের উৎপাদনে একটি উদ্বৃত্তের উপজেলা হওয়া সত্তেও বিগত কয়েকবছর যাবৎ ক্রমাগত মাছ উৎপাদন বিষেশ করে দেশী মাছের উৎপাদনের হার কমে যাচ্ছে।
মৎস্যচাষী ও মৎস্যজীবিদের সূত্রে জানা যায়, লাখাইয়ে দেশী প্রজাতির মাছের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে। একসময় হাওরবেষ্ঠিত লাখাইয়ে দেশী প্রজাতির মাছের প্রাচুর্য্য ছিল।
কালের বিবর্তনে উপজেলার নদনদী খালবিল গুলোতে পলি জমে ভরাট হয়ে যাওয়ায় এবং এগুলো খননের অভাবে নদীর নাব্যতা হ্রাস পেয়েছে।
এদিকে মরার উপর খাঁড়ার ঘাঁয়ের মতো বিগত ২০১৫ সাল থেকে হবিগঞ্জের উজানে শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলায় গড়ে উঠা শিল্পাঞ্চলের শিল্পবর্জ্যের প্রভাবে উপজেলার প্রধান ও দীর্ঘ নদী সুতাং আজ মৃতপ্রায়।
এতে লাখাইয়ে দেশী প্রজাতির মাছের প্রজনন ও উৎপাদনে পড়েছে নেতিবাচক প্রভাব।
প্রাপ্ত তথ্যে আরোও জানা যায়, একসময় লাখাই হাওর, নদনদী ও খালবিলে প্রচুর দেশীয় প্রজাতির কৈ, মাগুর, শিং, বাইলা, মেনি, চাপিলা, বোয়াল, পুটিঁ, টাকী, টেংরা, শোল, গজার, রানী, বাইন, বাচাঁ, সরপুঁটি, সেলা, পলৈ, খোলসে, গইন্যা, চিতল, বৈচা, দেশী আইর, মলা, ঢেলা, চিংড়ি, কালি বাউশঁ, লাচু সহ প্রায় ১৩১ প্রজাতির মাছ পাওয়া যেত। বর্তমানে এগুলোর অনেক প্রজাতিই বিলুপ্ত প্রায়।
দেশীয় প্রজাতির মাছ রক্ষায় নেই কোন উদ্যোগ। দেশী মাছের প্রজনন ও উৎপাদন বৃদ্ধি ও বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতি রক্ষায় লাখাইয়ে মৎস্য অভয়াশ্রম স্থাপনে দীর্ঘদিন যাবৎ দাবী জানিয়ে আসলেও তা অদ্যাবধি বাস্তবায়ন হয়নি।
দেশী মাছের উৎপাদন দিন দিন হ্রাস পাওয়ায় এখন চাষের মাছের উপর নির্ভরতা বেড়ে গেছে অনেকাংশে।
লাখাই উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর সুত্রে জানা যায়, লাখাইয়ে বার্ষিক মৎস্য উৎপাদন মোট ৫,৯০৬.৩২ মেট্রিকটন। বার্ষিক চাহিদা ৩,২৫৭.৪৫ মেট্রিকটন। উদ্বৃত্ত ৩,১৮০.৯২ মেট্রিকটন।
মোট উৎপাদনের মধ্যে পুকুর ও দীঘি তে উৎপাদন ১,৯৫৫.৫০ মেট্রিকটন। বাদবাকী উৎপাদিত হয় নদনদী, খালবিল, ডোবা, জলাশয় ও প্লাবন ভূমিতে।
এ ব্যপারে হবিগঞ্জ পরিবেশ আন্দোলন (হপা) লাখাই কমিটির সভাপতি মোঃ বাহার উদ্দিন জানান, “উপজেলার সুুতাং সাঁকাতি, বেলেশ্বরী-কানাই, মনিখাই, বলভদ্র, ধলেশ্বরী, মন্দিরপল্লা খাল সহ অপরাপর নদনদীগুলো খননের আওতায় আনতে পারলে এবং সেইসাথে শিল্পবর্জ্যের কবলে পড়া সুতাং নদী রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ এবং হাওরে মৎস্য অভয়াশ্রম স্থাপন ও নির্বিচারে পোনামাছ নিধন রোধ করতে পারলে দেশী মাছের প্রজনন ও উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে। রক্ষা করা যাবে বিলুপ্তপ্রায় মৎস্য প্রজাতি।”
এ ব্যাপারে উপজেলা মৎস্য অফিসার ইদ্রিস তালুকদার এর সাথে আলাপকালে জানান, “এ বছর বর্ষা যথাসময়ে না হয়ে বিলম্বিত বর্ষার কারণে মাছের বংশবৃদ্ধির সময়ে খালবিল শুকনো থাকায় এবং বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় মাছের বিশেষত দেশী মাছের উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে।”
“এ ছাড়া শিল্প বর্জ্যের প্রভাবেও তা ব্যাহত হচ্ছে। আমরা লাখাইয়ে মৎস্য অভয়াশ্রম স্থাপনের চেষ্টা চালাচ্ছি। এছাড়া পোনামাছ নিধন বন্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালিত হচ্ছে।”