শরিফ চৌধুরীঃ হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জে ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে বালু খেকো চক্রের সিন্ডিকেট। এবার রাতের আঁধারে নয় বরং প্রকাশ্য দিবালোকে কুশিয়ারার কালনী নদী থেকে ড্রেজার মেশিনের মাধ্যমে চলছে বালু উত্তোলন।
প্রকাশ্য দিবালোকে কুশিয়ারার কালনী নদী থেকে বালু উত্তোলন করা হলেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নীরবতায় জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
এতে করে একদিকে সরকার যেমন হারাচ্ছে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব, অপরদিকে আজমিরীগঞ্জ উপজেলার কাকাইলছেও ইউনিয়নের কামালপুর, রাহেলা, বদরপুর,নজরাকান্দা ও সৌলরী সহ প্রায় বেশ কটি গ্রাম সহ ফসলী জমি নদী ভাঙ্গনের মুখে পড়ার আশংখা করছে এলাকাবাসী।
ইতিমধ্যে নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে কাকাইলছেওয়র সাহানগর, নজরাকান্দা, উমেদনগর, রুদ্রনগর সহ কয়েকটি গ্রামের প্রায় অর্ধশত বসতভিটা ও ফসলিজমি।
গতকাল রবিবার সরেজমিন আজমিরীগঞ্জ পৌরসভার নৌ-টার্মিনাল এলাকার বাঁশ মহাল ও লঞ্চঘাট সংলগ্ন কুশিয়ারার কালনী নদীর তীরে গিয়ে এমন চিত্রই দেখা যায়।
জানা যায়, হবিগঞ্জের ভাটি এলাকার বন্দর নামে খ্যাত আজমিরীগঞ্জ উপজেলা এবং কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার সীমানার মধ্যস্হল দিয়ে বয়ে যাওয়া কুশিয়ারা-কালনী নদীর উত্তর -পশ্চিম তীরে ইটনা উপজেলা এবং পুর্ব-দক্ষিণ পাড়ে আজমিরীগঞ্জ উপজেলার অংশ।
কুশিয়ারার কালনী নদীতে রাতের আঁধারে দুইটি বড় ড্রেজার মেশিন ইটনার অংশে নোঙ্গর করা থাকলেও দিনের বেলা পু্র্ব- দক্ষিন তীরের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার সীমানা থেকে প্রকাশ্য দিবালোকে চলছে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন।
উত্তলনকৃত বালু প্রতি ঘনফুট ৮ থেকে ১০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে বিভিন্ন জায়গায়। এতে সরকার যেমন হারাচ্ছে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব অপরদিকে অপরিকল্পিত ভাবে বালু উত্তোলনের ফলে ইতিমধ্যে আজমিরীগঞ্জ উপজেলার কাকাইলছেও ইউনিয়নের প্রায় অর্ধশত বসতভিটা ও ফসলিজমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
এরই ধারাবাহিকতায়, গত জুলাই মাসের ১৫ তারিখে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সহ সংশিষ্টরা নদী ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শন করেন এবং ভাঙ্গন রোধে প্রায় ৮৯ লক্ষ টাকার জিও ব্যাগ বরাদ্ধ দেয়া হয়।
সূত্র জানায়, বিগত ২০১৮ সালের ২৬ শে নভেম্বর তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছাঃ নাঈমা খন্দকার একই জায়গা অর্থাৎ কুশিয়ারা- কালনী নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলনের দায়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ড্রেজার মেশিন চালক ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসির নগর উপজেলার ইদ্রিস মিয়ার পুত্র নিয়ামত উল্ল্যাহকে বালু – মাটি ব্যবস্হাপনা আইন ২০১০ এর ১৫(১) ধারা অনুযায়ী ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও ড্রেজার মেশিনের যন্ত্রাংশ পুড়িয়ে দেন।
এ ছাড়া বিগত ২০২০ সালের ১২ই ডিসেম্বর তৎকালীন সহকারী কমিশনার (ভুমি) উত্তম কুমার দাশ প্রায় ১৮ একর চর অবৈধ দখলদারদের কবল থেকে উদ্ধার করেন।
কিন্তু সম্প্রতি আবারও বালু খেকো চক্রটি সক্রিয় হয়ে উঠায় জনমনে নানা প্রশ্নের উদয় হয়েছে। অপর একটি সুত্রে জানায়, কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলা আওয়ামীলীগ ও মৃগা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী নেতা সহ আজমিরীগঞ্জের একটি প্রভাবশালী চক্র এই অবৈধ বালু উত্তোলনের সাথে সক্রিয় ভাবে জড়িত রয়েছে৷
এ বিষয়ে ইটনা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছাঃনাফিজা আক্তার এর যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই সাংবাদিক ভাইদের মাধ্যমে আমি জানতে পেরেছি।এটা নিশ্চয়ই পাশ্ববর্তী উপজেলা আজমিরীগঞ্জ হতে পারে।
খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। এছাড়া তিনি আরও জানান কিছু দিন পূর্বে ইটনায় ধনু নদীতে অবৈধ বালু উত্তোলন কারীদের মোবাইল কোর্টে মাধ্যমে ৪টি ড্রেজার মেশীন বোট ও একটি বড় স্টিল বডি জব্দ করা হয়। পরে ভ্রাম্যমান আদালতে ড্রেজার মালিকদের কে ২ লক্ষ ও স্টিল বডি মালিক কে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
এ বিষয়ে আজমিরীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছাঃ সুলতানা সালেহা সুমীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি দেখছি বলে জানান।