জনপ্রিয় ৫ সংবাদ

আরো কিছু সংবাদ

হবিগঞ্জে চা শ্রমিকের কর্মবিরতি ১ দিনে ৪০ লক্ষাধিক টাকার চা পাতা ক্ষতি

শ্রমিকদের অভিযোগ , দুর্গা পূজা আর ১০ দিন বাকি । কোম্পানি মালিক পক্ষের চা বাগানের চা-পাতা উৎপাদন খুবই কম হওয়া এবং বাজারে চায়ের মূল্য কম থাকায় বাগান কর্তৃপক্ষ হিমশিম খাচ্ছেন ।

পূজা উপলক্ষে কোম্পানি মালিক পক্ষ পাওনা টাকা না দেওয়ায় তারিখ করে ও তাদের এরিয়া এবং বোনাস পরিশোধ করেনি ।

সব শেষ ২ অক্টোবর কোম্পানি মালিক পক্ষ সময় চেয়ে বাগান শ্রমিক নেতাদের একটি চিঠি দেন । দেওন্দি টি কোম্পানি চারটি চা বাগান রয়েছে । চা বাগানের মধ্যে মৌলভীবাজার মিরথিংঙা চা বাগান , হবিগঞ্জে দেওন্দি চা বাগান , লাল চান্দ চা বাগান , নোয়াপাড়া চা বাগান ।

এ চারটি চা বাগানের মধ্যে মিরথিংঙা চা বাগান ও নোয়াপাড়া চা বাগান চালু রয়েছে । দেওন্দি টি কোম্পানির ম্যানেজিং ডাইরেক্টর এম ওয়াহিদুল হক স্বাক্ষরিত চিঠিতে ১০ অক্টোবর মধ্যে সকল পাওনা পরিশোধ করার কথা ছিল ।

১০ অক্টোবর কোম্পানি মালিক পক্ষ টাকা পরিশোধ করেনি ।

এদিকে দুর্গাপূজার বোনাস ও এরিয়ার ( বকেয়া বর্জিত বেতন) টাকা পরিশোধের দাবিতে হবিগঞ্জে চুনারুঘাট উপজেলার দেওন্দি চা বাগান ও লাল চান্দ চা বাগানে প্রায় ১৪ শত শ্রমিকদের কর্মবিরতি পালন করেছে ।

এ কর্মদিবস পালন করায় দুই চা বাগানের একদিকে প্রায় ৪০ লক্ষাধিক টাকার চা-পাতা নষ্ট হয়েছে ।

আজ বুধবার (১১ অক্টোবর ) ভোর সকাল থেকে চুনারুঘাটে দেওন্দি চা বাগানের নাচ ঘরে এই কর্মবিরতি পালন শুরু করেন দুটি চা বাগানের প্রায় ১৪ শত চা শ্রমিকরা সম্মিলিত ভাবে প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয় । চা বাগান বন্ধ রাখার নেতৃত্ব দেয় দেওন্দি চা বাগানের শ্রমিক সভাপতি ভুট্টো ।

শ্রমিক নেতাদের মধ্যে অনেক ধন্ধ রয়েছে কেউ চায় বাগান চালু রাখা , আবার কেউ চায় বাগান বন্ধ রাখা । অনেক সমস্যায় পড়ছে আপামর সাধারণ চা শ্রমিকরা ।

দেওন্দি চা বাগান ও ফাড়ি বাগান গিলানি , রঘুনন্দন ফাড়ি বাগান এবং লাল চান্দ চা বাগান শ্রমিকদের ১৯ মাসের এরিয়া প্রায় ৪২ লাখ টাকা বকেয়া পাওনা রয়েছে।

এ ছাড়া দুর্গা পূজার বোনাস জনপ্রতি ৫ হাজার ২ শত টাকা করে প্রায় ৭২ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে বাগান শ্রমিকরা জানান ।

সচেতন পাঁচ শতাধিক শ্রমিকরা অভিযোগ করে বলেন , চা বাগানের দীর্ঘ দিন ধরে শ্রমিক নেতাদের মধ্যে কোন্দলতা রয়েছে প্রতি হিংসা । বাগানে বিভিন্ন নেতৃত্ব নিয়ে বাগান কর্তৃপক্ষ হিমশিম খাচ্ছেন । সাধারণ চা শ্রমিকরা কাজ করতে ইচ্ছুক । শ্রমিক নেতারা বাধা দেয় ।

এদিকে দুর্গা পূজা ২১ অক্টোবর থেকে শুরু ২৪ অক্টোবর শেষ । চা বাগান কোম্পানি মালিক পক্ষ টাকা দেয়ার বারবার তারিখ করে ও শ্রমিকদের এরিয়া ও বোনাস পরিশোধ করেনি।

সবশেষ গত ২ অক্টোবর মালিক পক্ষ সময় চেয়ে শ্রমিক নেতাদের একটি চিঠি দেন । দেওন্দি চা বাগান কোম্পানি ম্যানেজিং ডাইরেক্টর এম ওয়াহিদুল হক স্বাক্ষরিত চিঠিতে ১০ অক্টোবর মধ্যে সকল পাওনা না পরিশোধ করার কথা ছিল কিন্তু ১০ অক্টোবর কোম্পানি মালিক পক্ষ টাকা পরিশোধ করেনি ।

দেওন্দি চা বাগানের শ্রমিক নিরালা ভৌমিক বলেন, বাগানের শ্রমিক নেতাদের কোন্দলতার কারণে বাগান অনেক ক্ষতি গ্রস্ত হচ্ছে । ‘ আমরা বারবার মালিক পক্ষের আশার কথা শুনে আসছি কিন্তু আমাদের দুর্গা পূজা উপলক্ষে টাকা পরিশোধ করছে না বিধায় এই কর্মবিরতি দিয়েছে ।

লস্করপুর ভ্যালির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনি শংকর বাউরি  বলেন , কোম্পানি মালিক এর টাল বাহানা শুনতে শুনতে এখন শ্রমিকরা ফুসে উঠেছেন । কর্মবিরতী পালন শেষে সিন্ধান্ত হয়েছে দেনা – পাওনা শোধ না হওয়া পর্যন্ত বাগান অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ থাকবে ।

কোম্পানি কর্তৃপক্ষ বলেন , চা বাগানে চা উৎপাদন কম হওয়ায় বাগান খুব লোকসানে রয়েছে ।

দেওন্দি বাগানের ফাঁড়ি রঘুনন্দন চা বাগানের সুশীল মালা ও লাল চান্দ চা বাগানের শ্রমিক রতন বাউরি  বলেন , সারা বছর চা বাগানে কাজ করে আশায় থাকি দুর্গা পূজায় সন্তানদের ভালো কাপড় ক্রয় করে দেব। অথচ দুর্গা পূজা আসার আগেই পাওনা টাকা নিয়ে টাল বাহানা করছেন কোম্পানি মালিক পক্ষ ।

দেওন্দি চা বাগানের সুজিত বাউরি বলেন , সকল চা বাগানে চা উৎপাদন কম হয়েছে এবং মালিক পক্ষ অনেক ক্ষতি সাধন হয়েছে কিন্তু বুধবার দুপুরে মৌলভীবাজার মিরথিংঙা চা বাগান থেকে এক ট্রাক কাচা চা দেওন্দি চা কারখানা এসেছে কিন্তু শ্রমিক কর্মবিরতী করায় কাচা চা পাতা নষ্ট হয়ে পড়েছে । শ্রমিকরা চা বাগানে কাজ করতে ইচ্ছুক কিন্তু দুটি চা বাগান বন্ধ । আর এই কোম্পানির দুটি চা বাগান খোলা রয়েছে ।

দেওন্দি চা বাগানের ম্যানেজার রিয়াজ উদ্দিন  বলেন , দুর্গা পূজা এসেছে আর ১০ দিন । বাগান শ্রমিকরা দুর্গা পূজা উপলক্ষে খরচ লাগে এবং বাগান শ্রমিকদের দাবী পাওনা টাকা পাওয়া সবই সঠিক । কিন্তু চা বাগানের উৎপাদন খুবই খারাপ । বাজারে চায়ের মূল্য কম থাকায় বাগানে আয় একেবারে কম । যার ফলে পাওনা টাকা ষথা সময়ে দেয়া সম্ভব হচ্ছে না ।

কর্তৃপক্ষ ধাপে ধাপে শ্রমিকদের পাওনা টাকা পরিশোধ করতে চাচ্ছে ।