বানিয়াচংয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন ৬ জন। এ ঘটনায় পুলিশসহ আহত হয়েছেন শতাধিক। এদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় ৬ জনকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। সোমবার দুপুর ২টা থেকে ৫টা পর্যন্ত বানিয়াচং থানা চত্বরে পুলিশের সাথে আন্দোলনকারীদের এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে নিহতরা হলেন- যাত্রাপাশা গ্রামের সানু মিয়ার পুত্র হাসান মিয়া (১৮), মাইঝের মহল্লা গ্রামের আঃ নূরের পুত্র আশরাফুল ইসলাম (১৮), পাড়াগাঁও গ্রামের শমশের মিয়ার পুত্র মোজাক্কির মিয়া (৪০), কামালখানী গ্রামের নয়ন মিয়া (১৮), জাতুকর্ণপাড়া গ্রামের আঃ রউফ এর পুত্র তোফাজ্জ্বল মিয়া (১৮), পূর্বঘর গ্রামের ধলাই মিয়ার পুত্র সাদিকুর (৩০)।
জানা যায়, সোমবার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ মিছিল করার জন্য বানিয়াচং এল আর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে জড়ো হয় হাজারো আন্দোলনকারী। বেলা ১২টার দিকে তাদের বিক্ষোভ মিছিলটি নতুন বাজার হয়ে বড়বাজারের শহীদ মিনারের সামনে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সভায় মিলিত হয়। পরে সেখান থেকে আন্দোলকারীরা মিছিল নিয়ে উপজেলা পরিষদ হয়ে বানিয়াচং থানার দিকে রওয়ানা দেয়। পথিমধ্যে আন্দোলনকারীরা উপজেলা পরিষদের হলরুম, বিএডিসি ভবন ভাঙচুর করে। এরই মধ্যে আন্দোলনকারীদের একাংশ বনিয়াচং থানায় বিক্ষোভ মিছিলটি নিয়ে গেলে শাহী ঈদগাহের সামনে আসা মাত্রই তাদের বাঁধা দেয় পুলিশ। এসময় আন্দোলনকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। একপর্যায়ে উভয় পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লে পুলিশ সদস্যরা রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড ও গুলি ছুঁড়তে থাকে। সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই পুলিশের গুলিতে নিহত হয় ৫ আন্দোলনকারী। এসময় পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত অবস্থায় ১ জনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তার। সংঘর্ষের একপর্যায়ে পুলিশ পিছু হটলে আন্দোলনকারীরা থানার প্রতিটি কক্ষসহ পুলিশ ম্যাচ, ওসির বাসভবন, জেলা পরিষদের ডাকবাংলো ও পশু হাসপাতালে আগুন ধরিয়ে দেয়। সংঘর্ষে পুলিশ সদস্যরা থানার ভিতরে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তাদেরকে উদ্ধার করতে সেনাবাহিনীর সদস্যরা উত্তেজিত আন্দোলনকারীদের ধমন করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এদিকে আন্দোলকারীদের বিক্ষোভ মিছিলকে ঘিরে বানিয়াচং উপজেলায় ব্যবসায়ীসহ জনসাধারণের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ভয়ে জনসাধারণ স্বাভাবিক চলাফেরা ও বাজারের ব্যবসায়ীরা আতঙ্কে সকাল থেকেই দোকানপাট বন্ধ করে রেখেছেন।
বানিয়াচং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ইউএইচএফপিও ডা. শামিমা আক্তার জানান, গুলিবিদ্ধ হয়ে ৬জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে ১ জন চিকিৎসাধীন অবস্থায় এবং বাকি ৫জন ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ৩ জনের বয়স ১৮ থেকে ২০ বছর আর বাকি ৩ জনের বয়স ৪০ থেকে ৫০ এর মধ্যে।
বানিয়াচং থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) দেলোয়ার হোসাইন জানান, এই মুহুর্তে আমি কারো সাথে যোগাযোগ করতে পারতেছিনা। অনেকেই যে যার মতো করে অন্যত্র সরে রয়েছেন। তবে কয়েক পুলিশ সদস্য আহত আছে।