শিল্পকলা ও সংগীত অঙ্গণে বিশেষ অবদান রাখায় স্বীকৃতি স্বরুপ হবিগঞ্জের কৃতি সন্তান কণ্ঠশিল্পী সুবীর নন্দী একুশে পদকের জন্য মনোনীত হয়েছেন।
গতকাল বুধবার সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রাষ্ট্রীয় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদক প্রাপ্তদের এ তালিকা প্রকাশ করে। এতে বিভিন্ন অঙ্গণে বিশেষ অবদান রাখায় দেশের মোট ২১ জনকে এ সম্মাননা দেয়া হচ্ছে।
আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদেরকে এ একুশে পদক তুলে দেবেন।
সুবীর নন্দী হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং থানায় নন্দী পাড়া নামক মহল্লায় এক কায়স্থ সম্ভ্রান্ত সঙ্গীত পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তার নানা বাড়ি শ্রীমঙ্গল উপজেলার বাদেআলিশা গ্রামে। তার পিতা- সুধাংশু নন্দী ছিলেন একজন চিকিৎসক ও সঙ্গীতপ্রেমী। তার মা পুতুল রানী চমৎকার গান গাইতেন কিন্তু রেডিও বা পেশদারিত্বে আসেননি।
ছোটবেলা থেকেই তিনি ভাই-বোনদের সঙ্গে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে তালিম নিতে শুরু করেন ওস্তাদ বাবর আলী খানের কাছে। তবে সঙ্গীতে তার হাতেখড়ি মায়ের কাছেই। বাবার চাকরি সূত্রে তার শৈশবকাল চা বাগানেই কেটেছে। পাঁচ-ছয় বছর বয়স পর্যন্ত বাগানেই ছিলেন।
চা বাগানে খ্রিস্টান মিশনারিদের একটি স্কুল ছিল, সেখানেই পড়াশোনা করেন। তবে পড়াশোনার অধিকাংশ সময়ই তার কেটেছে হবিগঞ্জ শহরে। পড়েছেন হবিগঞ্জ গভঃ হাইস্কুলে। তারপর হবিগঞ্জ বৃন্দাবন কলেজে। মুক্তিযুদ্ধের সময় সুবীর নন্দী সেকেন্ড ইয়ারে পড়তেন।
১৯৬৩ সালে তৃতীয় শ্রেণী থেকেই তিনি গান করতেন। এরপর ১৯৬৭ সালে তিনি সিলেট বেতারে গান করেন। তার গানের ওস্তাদ ছিলেন গুরু বাবর আলী খান। লোকগানে ছিলেন বিদিত লাল দাশ। সুবীর নন্দী গানের জগতে আসেন ১৯৭০ সালে ঢাকা রেডিওতে প্রথম রেকর্ডিং এর মধ্য দিয়ে। প্রথম গান ‘যদি কেউ ধূপ জ্বেলে দেয়’।
৪০ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে গেয়েছেন আড়াই হাজারেরও বেশি গান। বেতার থেকে টেলিভিশন, তারপর চলচ্চিত্রে গেয়েছেন অসংখ্য জনপ্রিয় গান। চলচ্চিত্রে প্রথম গান করেন ১৯৭৬ সালে আব্দুস সামাদ পরিচালিত সূর্যগ্রহণ চলচ্চিত্রে। ১৯৮১ সালে তার একক অ্যালবাম “সুবীর নন্দীর গান” ডিসকো রেকর্ডিংয়ের ব্যানারে বাজারে আসে। তিনি গানের পাশাপাশি দীর্ঘদিন চাকরি করেছেন ব্যাংকে।
তার গাওয়া চলচ্চিত্রের তালিকাঃ সূর্যগ্রহণ (১৯৭৬), অশিক্ষিত (১৯৭৮), দিন যায় কথা থাকে (১৯৭৯), মহানায়ক (১৯৮৪), চন্দ্রনাথ (১৯৮৪), শুভদা (১৯৮৬), রাজলক্ষী শ্রীকান্ত (১৯৮৭), রাঙা ভাবী (১৯৮৯), পদ্মা মেঘনা যমুনা (১৯৯১), শ্রাবণ মেঘের দিন (১৯৯৯), চন্দ্রকথা (২০০৩), মেঘের পরে মেঘ (২০০৪), শ্যামল ছায়া (২০০৪), আকাশ ছোঁয়া ভালোবাসা (২০০৮), অবুঝ বউ (২০১০)।
এচাড়াও তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার – (মহানায়ক – ১৯৮৪, শুভদা – ১৯৮৬, শ্রাবণ মেঘের দিন – ১৯৯৯, মেঘের পরে মেঘ – ২০০৪) এবং বাচসাস পুরস্কার – (১৯৭৭, ১৯৮৪, ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সাল) লাভ করেন।