জনপ্রিয় ৫ সংবাদ

আরো কিছু সংবাদ

মিমি আপার পাঠশালা

গ্রামের নাম সোহাদিয়া। কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে শহরের অবস্থান থাকলেও এখনও জীর্ণশীর্ণ রয়ে গেছে গ্রামটি। এখানে কয়েক হাজার লোকের বসবাস হলেও দারিদ্র্যসীমার নিচে অনেকের অবস্থান।

নানা কারণে অনগ্রসর গ্রামটির একটি অংশের শিশুরা শিক্ষাবঞ্চিত হয়ে আসছিল দীর্ঘদিন। এসব শিশুর মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে এগিয়ে এলেন এলাকার তরুণ-তরুণীরা। তারা নিজেদের উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন শিশুদের বর্ণমালা শেখার পাঠশালা। তাদের লক্ষ্য একটাই- গ্রামের শিশুদের আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা।

Mimi Apar Pathsala

পাঠশালার উদ্যোক্তারা জানান, গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের সোহাদিয়া গ্রামে সহস্রাধিক পরিবারের বসবাস। গ্রামের পাশেই রয়েছে হরতকিটেক নামের আরেকটি গ্রাম। দুই গ্রামে নেই প্রাথমিক বিদ্যালয়। সচেতন অভিভাবকরা সন্তানদের দুই থেকে আড়াই কিলোমিটার দূরের বিদ্যালয়ে পাঠান।

তবে দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থানকারী পরিবারের শিশুদের দূরের গন্তব্যের কারণে শিক্ষার আগ্রহ কম। গ্রামের খাসপাড়া এলাকায় সরকারি ভূমিতে প্রায় অর্ধশত পরিবারের শিশুরা শিক্ষাবঞ্চিত হয়ে আসছিল। তাদের পাশে দাঁড়াতে এলাকার কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ১২ জন বন্ধু মিলে বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিক্ষার আলো থেকে দূরে থাকা শিশুদের নিয়ে গড়ে তুলেছেন বর্ণমালা শেখার পাঠশালা। এটি এখন ‘মিমি আপার পাঠশালা’ নামে পরিচিত। এই পাঠশালা পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন স্নাতকে অধ্যয়নরত হাবিবুন নেসা মিমি।

মিমি বলেন, গ্রামের অনগ্রসর পরিবারের কেউ দূর গন্তব্যের কারণে, আবার কেউ দারিদ্র্যের অজুহাতে শিশুদের শিক্ষাবঞ্চিত করে আসছিল। এটি দেশের জন্য শিক্ষিত নাগরিক গড়ে তোলার অন্তরায়। দেশকে এগিয়ে নিতে এসব শিশুকে শিক্ষার আলোয় নিয়ে আসতে পাঠশালা গড়ার উদ্যোগ নিই। আনন্দদায়ক শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করে শিশুদের বর্ণমালার সঙ্গে পরিচয় করে দেয়াই আমাদের লক্ষ্য। মুজিববর্ষকে সামনে রেখে প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু হয় ১৫ জানুয়ারি। পাঠশালায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪০ জন। স্থানীয় খোলা মাঠে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত শিক্ষাগ্রহণ করে শিশুরা।

হাবিবুন নেসা মিমি বলেন, এখন খোলা আকাশের নিচে শিশুদের পাঠশালা থাকলেও একসময় এ অবস্থা থাকবে না। এ বছর নাম নিবন্ধন করে বিভিন্ন বিদ্যালয় থেকে বই সংগ্রহ করে শিশুদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। স্বেচ্ছাশ্রমে পরিচালিত পাঠশালার শিশুদের বসার সমস্যার সমাধানে স্থানীয় বিভিন্ন ব্যক্তি বেঞ্চ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছেন।

পাঠশালার আরেক উদ্যোক্তা আসাদুজ্জামান বলেন, আমাদের প্রত্যেকেরই কিছু নৈতিক দায়িত্ব আছে। সে দায়িত্ব থেকে মূলত একাজে সম্পৃক্ত হওয়া। নিজে শিক্ষিত হলে প্রতিবেশী অশিক্ষিত থাকলেও এর দায় বর্তাবে নিজের ওপরে। তাই এলাকার শিক্ষাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষার আলোয় নিয়ে আসতে আমাদের এই প্রচেষ্টা।

স্থানীয় ওয়ার্ড সদস্য হুমায়ুন কবির বলেন, পাশাপাশি দুই গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকায় শিশুদের শিক্ষায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে। মিমির পাঠশালা হওয়ায় এলাকার অনেক অভিভাবক স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। এতে অন্তত শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত হবে।

এলাকার তরুণদের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে গাজীপুর ভাওয়াল বদরে আলম কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক অসিম বিভাকর বলেন, একবিংশ শতাব্দীতে এসেও আমাদের দেশের প্রত্যন্ত এলাকার শিশুরা শিক্ষাবঞ্চিত হওয়া সত্যিই দুঃখজনক। এই এলাকার তরুণদের এমন উদ্যোগে অনিশ্চিত ভবিষ্যতে গন্তব্য করা শিশুরা শিক্ষার আলো পেয়ে আলোকিত মানুষ হবে। এমন কাজে সরকারি-বেসরকারি সহায়তা অব্যাহত রাখা প্রয়োজন।

গাজীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোফাজ্জল হোসেন বলেন, এলাকার তরুণদের এমন উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসার। তাদের এই পাঠশালার শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণসহ সরকারি সহায়তা দেয়া হবে। প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছে বর্তমান সরকার। সে লক্ষ্যে আগামীতে সারাদেশে সহস্রাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণের প্রক্রিয়া চলছে। সোহাদিয়া গ্রামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সম্ভাব্যতা যাচাই করে দেখব আমরা।